পিচ্চি বউ পর্ব - 08
# পিচ্চি বউ #
Part – 08
% লেখক : রুবেল %
তারপর আম্মুকে ছেড়ে ঘরে গিয়ে রিয়ার রেখে যাওয়া স্মৃতি গুলোর কথা ভাবছি আর কাদছিলাম . আজ খুব বলতে ইচ্ছা করছে . আমি আমার রিয়াকে ভালোবাসে . আমি আমার পিচ্চি বউটাকে খুব ভালোবাসি . কিন্তু আজ আমার কথা শুনার জন্য রিয়া আমার পাশে নেই . আজ নিজের দোষে রিয়াকে হারালাম . এসব ভাবছি আর চোখের পানি ফেলছিলাম . তখনি হঠাং চোখ পড়ে টেবিলে রাখা কাজজের উপর . আমি কাগজটা হাতে নিলাম . কাগজটা একটা চিঠি . হাতের লেখা দেখে মনে হচ্ছে এটা আমার পিচ্চির হাতের লেখা .তারমানে এগুলো আমার পিচ্চি বউ রেখে গেছে . .তারপর চিঠিটা খুললাম …..
.
# চিঠি #
.
জানিনা কিভাবে শুরু করব . তাও বলতেই হবে তাই বলছি . আশা করি বাড়িতে এসে আমায় না দেখে হয়ত তুমি খুশি হয়েছ , তোমাই অনেক ভালোবাসতাম তাই ভালোবাসার মানুষ কষ্টে থাকুক আমি চাইনা তাই তোমার ইচ্ছা অনুযায়ী চলে গেলাম তোমার জীবন থেকে . জান তোমায় খুব ভালোবাসতাম হয়ত নিজের থেকেও অনেক বেশি . খুব ইচ্ছা ছিল সারা জীবন তোমার পাশে থাকার কিন্তু পারলাম না . হয়তো আমার কপাল এতটাও ভালো না তাই তোমায় পেয়েও হারালাম . জানো তোমায় ছেড়ে আসতে খুব কষ্ট হচ্ছিল মনটা বার বার তোমার সাথে থাকতে চাইছিল . তাই আমি তো চলে আসলাম কিন্তু আমার মনটাকে তোমার কাছেই রেখে আসলাম . আর কোন দিন তোমার কাছে তোমার স্ত্রীর দাবি নিয়ে আসব না তবে আমি তোমার স্ত্রীর পরিচয় নিয়ে থাকতে চাই তাই ডির্বোস দিতে পারব না . তুমি রাইসাকে বিয়ে করে সুখে থেক . আমি নাহয় তোমার স্মৃতি নিয়া বেচে থাকব নাহলে তোমার স্ত্রীর পরিচয় নিয়ায় নাহয় এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যাব . আল্লাহর কাছে একটাই দোয়া করি তুমি সুখে থাক , ভালো থাক ……….
.
ইতি …
তোমার ভালোবাসার বিখারী রিয়া
রিয়ার চিঠিটা পড়ে কান্নাই ভেঙ্গে পড়লাম . নিজের প্রতি খুব ঘৃনা হচ্ছে . কেন করলাম আমি এমন রিয়ার সাথে . এখন কোথায় পাবো রিয়াকে . কোথায় খুজব . ওকে না পেলে যে আমি থাকতে পারব না . রিয়া যে আমার নিশ্বাস এর সাথে মিশে গেছে . ওকে ছাড়া থাকব কিভাবে .এসব ভেবে পাগলের মত বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়লাম রিয়াকে খুজতে . রাস্তা দিয়ে হাটছি আর রিয়াকে পাগলের মত খুজতেছি কিন্তু কোথাও খুজে পাচ্ছি না . আজ না চাইতেই চোখের পানি পড়ছে . কেন জানি শরীরটা অবস হয়ে আসছিল . চোখটা ঝাপসা হয়ে গেল হঠাং কিছুর সাথে ধাক্কা খেলমা আর ছিটকে পড়লাম রাস্তার পাশে . চোখগুলো আসতে আসতে বন্ধ হয়ে গেল . তারপর আর কিছু মনে নাই . . . .
যখন চোখ খুললাম নিজেকে হাসপাতালের বিছানায় দেখলাম . পাশে মা – বাবা বসে চোখের পানি ফেলছে . আমি চোখ খুলেছি তারা দেখিনি …….
আমি – আম্মু…………… ( আসতে করে ডাক দিলাম )
।
আমার ডাক শুনে মা বাবা দুজনেই আমার দিকে তাকালো ……….
আম্মু – তুই চোখ খুলেছিস বাবা . আমি জানতাম আমার রুবেল আমাকে ছেড়ে কোথাও যেতেই পারে না .. (আমাকে জরিয়ে ধরে কেদে কেদে বলল)
।
আব্বু – এখন কেমন লাগছে , কষ্ট হচ্ছে কি ……………..( আমার মাথাই হাত বুলিয়ে দিয়ে )
।
আমি – না . কিন্তু আমার কি হয়েছিল . . . আর আমি এখানে কেন ……………?
।
আম্মু – তুই accident করছিলি . আর আজ 7 দিন পর তুই চোখ খুলে তাকালি ……
আম্মুর কথা শুনে অবাক হলাম .তারমানে আমি আজ 7দিন ধরে অঙ্গান ছিলাম …
আমি – আব্বু …………..
।
আব্বু – হুম বাবা বলল, কিছু বলবি কি ………..?
।
আমি – তোমরা কি রিয়ার কোনো খুজ পেয়েছ ……………..( অসহায় ভাবে )
।
আব্বু – নারে বাবা . রিয়ামাকে আমরা অনেক খুজেছি কিন্তু কোথাও পাইনি . রিয়া আমাদের উপর অভিমান করে অনেক দুরে চলে গেছে ………….. (আমার হাত ধরে কেদে কেদে বলল)
।
আব্বুর কথা শুনে নিজের অজানতেই চোখের পানি পড়তে লাগলো . বুকের বা পাশে চিন চিন ব্যাথা করতে লাগলো .
আম্মু – কাদিস না বাবা রিয়া একদিন ঠিকই তোর কাছে আসবে ……… ওকে আসতেই হবে . তোর ভালোবাসার জোর একদিন ওকে তোর কাছে ফিরিয়ে দিবে তুই দেখিস ……
।
আম্মুর কথা শুণে আম্মুকে জরিয়ে ধরে কাদতে লাগলাম . তারপর আরও 7 দিন হাসপাতালে থেকে বাসায় ফিরে আসলাম . এখন আর আগের মত থাকতে পারিনা . সারাদিন ঘরে থাকি আর রিয়ার কথা ভেবে দিন কাটায় . কারো সাথে ঠিকমত কথা বলি না . ঠিকমত খাইনা.এভাবে আরও 1 বছর কেটে গেল কিন্তু আমি এখনো আমার রিয়াকে খুজে পেলাম না. আজ সকালে . খাবার টেবিলে আনমনে বসে খাবার খাচ্ছিলাম তখন …………….
আব্বু – রুবেল ……………?
।
আমি – হুম আব্বু
।
আব্বু – বাবা এভাবে আর কত নিজেকে কষ্ট দিবি . আমরা তোর এই কষ্ট আর সহ্য করতে পারছি না . এখনত একটু নিজেকে নিয়ে ভাব . আবার নতুন করে সব শুরু কর . . .
।
আমি – না বাবা , আমি আর নতুন করে শুরু করতে পারব না . আমি বাকি জীবনটা আমার রিয়ার স্মৃতি নিয়ে বাচতে চাই . প্লিজ তোমরা আমায় জোর কর না……….
।
বাবা – আচ্ছা ঠিক আছে ,আমরা তোকে জোর করব না . তবে তুই এখন আর বাড়িতে একা মন মরা হয়ে বসে থাকতে পারবি না …………
।
আমি – তাহলে কি করব অমি ……………?
।
আব্বু – কাল থেকে তুই আমার অফিসে যাবি .আর আমার অফিসের সব দায়িত্ব আমি এবার তোর হাতে তুলে দিতে চাই. প্লিজ বাবা আর না করিস না . তোকে এভাবে মন মরা দেখলে আমাদের খুব কষ্ট হয় . আমাদের কথা ভেবে নিজেকে কাজে ব্যস্ত রাখ দেখবি মন ভালো থাকবে …………( হাত ধরে )
।
আমি – তোমরা যেহেতু এত করে বলছ ঠিক আছে আমি কাল থেকে অফিসে যাব …………
।
তারপর সবাই খেয়ে নিলাম তারপরের দিন আব্বুর কথার মত আমাদের অফিসে এমডি হয়ে জয়েন করলাম . এখন দিনগুলো ভালোই কাটছে কাজের মাঝে . কাজের মাধ্যমে নিজেকে ব্যাস্ত রাখি . কারন ছাড়া বেশি কথা বলি না . এমনি অফিসেও কারন ছাড়া কথা বলিনা . রিয়া থাকার সময় যে হাসতাম এখন আর হাসতেও পারি না রিয়া যাওয়ার সাথে সাথে আমার মুখের হাসিটাও চলে গেছে . হঠাং একদিন …
পিয়ন – স্যার আসব ……………
।
আমি – হুম আসুন . . . .
।
পিয়ন – স্যার চাকরির জন্য কিছু পুরুষ আর মহিলা এসেছে তাদের কি এক এক করে পাঠাবো আপনার কাছে ……………..?
।
আমি – হুম পাঠিয়ে দেন ……….
।
সবার ইন্টারবিও শেষ এখন আর একজন মহিলা আছে তাই তাকে পাঠাতে বললাম . . . .
মহিলাটি – May I came in sir …..
।
আমি – yes came in ……( বসুন . কথাটা বলে সামনে তাকাতেই আমি অবাক হলাম কারন এত রাইসা , রাইসা আমার অফিসে কি করছে )
।
রাইসা আমাকে দেখে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে . আমি কি বলব কিছু বুঝতে পারছি না তাই তাকে বসতে বললাম .
আমি – বসুন …………… (না চেনার ভান করে)
।
রাইসা – এটা কি তোমার কোম্পানি ……..?( অবাক হয়ে )
।
আমি – তুমি না আপনি বলুন আর হ্যা এটা আমার বাবার কোম্পানি ছিল এখন আমার ……….. (সাধারন ভাবে )
।
রাইসা – sorry ( মাথা নিচু করে )
।
তারপর রাইসার সার্টিফিকেট গুলো নিয়ে দেখলাম . তারপর………….
আমি – আগে কোথাও কি কাজ করেছেন আপনি……………?
।
রাইসা – না . এটাই প্রথম হবে ………
।
আমি – দু:খিত আমরা আপনাকে এই চাকরিটা দিতে পারব না. . . . আপনি অন্য কোথাও চেষ্টা করেন ….( গম্ভীর ভাবে )
।
রাইসা – রুবেল প্লিজ আমায় মাফ করে দেও . বিশ্বাস কর আমার এই চাকরিটা খুব দরকার . এই চাকরিটা না পেলে আমার পরিবার আর আমি না খেয়ে মারা যাব . . . . (কান্না করে)
।
আমি – দয়া করে আমার নাম আপনার ওই মুখে নিবেন না . আমার নাম ধরে ডাকার অধিকার শুধু আমার আপনজনদের আছে . আপনার মত বেইমান বিশ্বাসঘাতকদের নেই . . . .তাছাড়া আপনার হাজবেন্ড চাকরি করে তাহলে আপনার চাকরির কি দরকার ……….?
।
রাইসা – তোমার উপর যে অন্যায় করে ছিলাম হয়ত সে অন্যায়ের ফল হিসেবে উপর আল্লাহ আমার আর আমার হাজবেন্ডকে আলাদা করে দিয়েছে ……………. (কেদে কেদে)
।
আমি – কেন . কি হয়েছে আপনার হাজবেন্ডের ………..?
।
রাইসা – বিয়ের ছয়মাস পর শাকিল অন্য একটা মেয়েকে বিয়ে করে আমায় ডির্বোস দিয়ে দেয় ……….( চোখ মুছতে মুছতে )
।
আমি – হুম বুঝলাম . আসলে উপরে একজন আছে যে আমাদের অন্যায়ের বিচার করে আর তার বিচার থেকে কেউ বাদ যায়না . যাক হোক আপনি এখন আসতে পারেন আসলে আমি এখন বের হব ……..( বসা থেকে উঠে )
।
রাইসা – তাহলে কি আমার চাকরিটা হবে না …………? (করুন চোখে)
।
আমি – বলতে পারছিন . হয়ত না ,24 ঘন্টার মধ্যে অফিস থেকে আপনাকে জানানো হবে ……
।
কথাটা বলেই আমি চলে আসছি আর রাইসা আমার চলে যাওয়ার পথে তাকিয়ে আছে . তারপর অফিস থেকে বাড়িতে এসে র্ফ্রেস হয়ে বাবা মার সাথে দুপুরের খাবার খেলাম . তারপর ঘরে এসে রিয়ার কথাগুলো ভাবছিলাম হঠাং ফোনটা বেজে ওঠল ……. কিন্তু নাম্বারটা অচেনা যেদিন থেকে হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরেছি সেদিন থেকে এই নাম্বার থেকে দিনে একবার করে কল আসে কিন্তু ফোন ধরলে কেউ কথা বলে না. আজও তাই হল. তারপর ফোন রেখে ঘুমিয়ে পড়লাম হঠাং ঘুম ভাঙ্গল ফোনের আওয়াজ পেয়ে . ফোন ধরতেই ওপাশ থেকে সিলেটের অফিসের ম্যানেজার বলল ওখানে নাকি কি সমস্যা হয়েছে তাই আমায় সেখানে যেতে বলল . তারপর রাতে খেয়ে বাবা মাকে বললাম আমি দুদিন পর সিলেটে যাচ্ছি . পরের দিন অফিসে আসতেই ……..
পিয়ন – স্যার আপনার সাথে একজন বয়সক লোক দেখা করতে এসেছে ………..?
।
আমি – পাঠিয়ে দেন …
।
তারপর লোকটা আমার কেবিনে ঢুকতেই তাকে দেখে আমি অবাক হলাম কারন এনিত রাইসার বাবা .
আমি – আংকেল আপনি এখানে কেন … ? কিছু দরকার আছে কি …….?
।
রাইসার বাবা – বাবা তোমায় একটা অনুরোধ করতে এসেছি ………….
।
আমি – জ্বী বলুন ……….
।
রাইসার বাবা – বাবা আমার মেয়েটাকে কি মাফ করা যায় না. রাইসার এই চাকরিটা খুব দরকার . চাকরিটা না পেলে আমরা না খেতে পেয়ে হয়ত মারা যাব . (রাইসা আমার সাথে কি করেছে সেটা তার বাবা জানল কিভাবে হয়ত বলেছে মনে মনে)
।
আমি – আমি থাকতে আপনাদের কিছু হবে না . আপনি বাসায় যান . রাইসার চাকরি হয়ে যাবে ……
।
রাইসার বাবা – তোমার মনটা অনেক বড় বাবা . তোমার এই দয়া আমরা কখনো ভুলব না. . .
।
আমি – এভাবে বলতে হবে না . আমি ত আপনার ছেলের মত . আর আমি কথা দিচ্ছি আমি থাকতে আপনাদের কিছু হতে দিব না.
।
তারপর তাকে গাড়ি দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দিলাম . আর আমি সিলেটের দিকে রওনা দিলাম . সিলেটের অফিসে গিয়ে যা দেখলাম তাতে আমি পুরো অবাক হলাম আবার খুশিও হলাম …………………….
.
.
.
সবাই কমেন্ট না করলে আর লিখব না
Comments
Post a Comment